সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার উদ্যোগ
মূল্যস্ফীতির কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়লেও নতুন পে স্কেল (বেতন কাঠামো) দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই সরকারের। তবে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে পর্যালোচনা ও সুপারিশ করতে অর্থ মন্ত্রণালয় একটি কমিটি গঠন করেছে।
পর্যালোচনা কমিটির গঠন
গত বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে একটি অফিস আদেশ জারি করা হয়। এতে প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিবকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, অর্থ সচিব, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সচিবসহ আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।
কমিটির দায়িত্ব হবে মহার্ঘ ভাতা প্রযোজ্যতার বিষয়টি বিশ্লেষণ এবং এ বিষয়ে সুপারিশ প্রদান করা। পাশাপাশি, প্রয়োজন হলে কমিটি নতুন কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে।
পে স্কেল ও মূল্যস্ফীতির প্রভাব
সাধারণত প্রতি পাঁচ বছর অন্তর একটি নতুন বেতন স্কেল ঘোষণা করা হয়। সর্বশেষ ২০১৫ সালে অষ্টম পে স্কেল কার্যকর হয়। তবে গত প্রায় ৯ বছর ধরে নতুন কোনো স্কেল ঘোষণা করা হয়নি। এর ফলে চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আর্থিকভাবে সংকটে রয়েছেন।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে মূল বেতনের ওপর ২০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হলেও তা কার্যকর হয়নি। এর পরিবর্তে কর্মচারীদের মূল বেতনের ৫ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এর ফলে ১০ম থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীদের বেতন সামান্য বৃদ্ধি পায়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতে, চলমান অর্থনৈতিক সংকটের কারণে নতুন পে স্কেল ঘোষণা সম্ভব নয়। তবে মহার্ঘ ভাতা প্রদানের মাধ্যমে সরকারি কর্মচারীদের জীবনযাত্রার ব্যয় কিছুটা কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
মূল্যস্ফীতি ও বাজেট পরিস্থিতি
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বরে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ১৩.৮০ শতাংশ এবং খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে ৯.৩৯ শতাংশ।
বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে প্রায় ১৪.৫ লাখ কর্মচারী কর্মরত। তাদের বেতন-ভাতা বাবদ চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ৮১ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। তবে মহার্ঘ ভাতার জন্য আলাদা বরাদ্দ না থাকায় তা পরিচালন বাজেটের অন্য খাত থেকে সমন্বয় করা হবে।
প্রতিক্রিয়া
সরকারের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ। পরিষদের সভাপতি মো. বাদিউল কবির ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব নিজাম উদ্দিন আহমেদ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মান বজায় রাখতে মহার্ঘ ভাতা একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not enter any spam link in the comment box.