রহস্যময় ওরফিশ: কেয়ামতের দূত নাকি নিছক কাকতালীয় ঘটনা?
সমুদ্র, পৃথিবীর প্রায় চার ভাগের তিন ভাগজুড়ে বিস্তৃত রহস্যময় জলের ভান্ডার। এই বিশাল জলরাশির গভীরে কতশত প্রাণীর বাস, তার অনেকটাই আজও মানুষের অজানা। গভীর সাগরের এমন এক রহস্যময় প্রাণী হলো ওরফিশ (Regalecus glesne), যাকে বলা হয় "Harbinger of Doom" বা বাংলায় "কেয়ামতের দূত"। সম্প্রতি ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলে এক বিরল ওরফিশের দেখা পাওয়া গেছে, যা নিয়ে আবার আলোচনার ঝড় উঠেছে।
ওরফিশ: বিশাল আর অদ্ভুত দর্শন
ওরফিশ সাধারণত সমুদ্রের ১০০০ মিটার গভীরে মেসোপেলাজিক জোনে বাস করে। এদের দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ৩০ ফুট পর্যন্ত হতে পারে, যা এটিকে বিশ্বের দীর্ঘতম হাড়ওয়ালা মাছ হিসেবে পরিচিত করেছে। রূপালী বর্ণের এই মাছ পানিতে ভেসে থাকার জন্য বিশেষ কৌশল ব্যবহার করে, আর চলাফেরায় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে উল্লম্ব ভঙ্গিতে। এরা সাধারণত ক্রিল ও প্ল্যাঙ্কটন জাতীয় ক্ষুদ্র প্রাণী খেয়ে বেঁচে থাকে।
"Doomsday Fish" নামে পরিচিতির কারণ
ওরফিশকে ঘিরে যে কল্পকাহিনি রয়েছে, তা বেশ চমকপ্রদ। বলা হয়, যেখানে এই মাছ দেখা যায়, সেখানে বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটার আশঙ্কা থাকে। ইতিহাসে একাধিকবার এরকম ঘটনা ঘটেছে, যা অনেকের বিশ্বাসকে আরও শক্তিশালী করেছে।
উদাহরণস্বরূপ:
২০১১ সালের জাপান ভূমিকম্প: ভূমিকম্পের কিছুদিন আগেই জাপানের উপকূলে প্রায় ২০টি ওরফিশ ভেসে উঠেছিল।
২০১৭ সালে ফিলিপিনস: ফিলিপিনের মিনডানোতে কয়েকটি ওরফিশ দেখা যাওয়ার কিছুদিন পর ৬.৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়।
১৯৬০ সালের চিলি ভূমিকম্প: স্মরণকালের সবচেয়ে শক্তিশালী ৯.৫ মাত্রার ভূমিকম্পের আগে সেখানকার স্থানীয়রা ওরফিশসহ আরও কিছু অদ্ভুত সামুদ্রিক প্রাণী দেখতে পেয়েছিল।
কেয়ামতের দূত নাকি নিছক কাকতালীয়?
ওরফিশ সাধারণত গভীর সমুদ্রের মাছ। এটি খুব দুর্বল বা আহত না হলে সহজে উপরের পানিতে আসে না। তবে এই মাছের "দূত" হয়ে ওঠার পেছনে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও রয়েছে। সমুদ্রের গভীরে ভূমিকম্প বা টেকটোনিক প্লেটের নড়াচড়ার সময় পানির তাপমাত্রা ও চাপের পরিবর্তন হয়, যা গভীর জলের মাছগুলোকে উপরের দিকে নিয়ে আসতে পারে। ফলে ওরফিশের আবির্ভাব দুর্যোগের পূর্বাভাস হিসেবে দেখা যেতে পারে।
তবে অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন, এটি নিছক কাকতালীয় ঘটনা। এদের দেখা যাওয়ার সময় এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে সরাসরি কোনো সম্পর্ক এখনও প্রমাণিত হয়নি।
আপনার মতামত কী?
ওরফিশকে ঘিরে এই কল্পকাহিনি এবং বাস্তবতার মিশেলে গড়ে ওঠা রহস্য আপনাকে কী ভাবায়? এটি কি প্রকৃতির কোনো সতর্কবার্তা, নাকি মানুষই কল্পনায় এটি "কেয়ামতের দূত" বানিয়ে ফেলেছে? আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না।
তথ্যসূত্র: Ocean Conservancy
إرسال تعليق
Please do not enter any spam link in the comment box.