অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর
ঢাকা, ১ ডিসেম্বর ২০২৪:
গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অবৈধভাবে পাচার হয়েছে বলে অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র কমিটির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। আজ রোববার, কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের তেজগাঁও কার্যালয়ে এই চূড়ান্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন।
কমিটি জানায়, দুর্নীতিগ্রস্ত শাসন ও আর্থিক অপচয়ের ভয়াবহ চিত্র এই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস কমিটির কাজের প্রশংসা করে বলেন, "এই প্রতিবেদনটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা উচিত এবং এর গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো শিক্ষার্থীদের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। এটি আমাদের জন্য একটি ঐতিহাসিক দলিল।"
তিনি আরও বলেন, "শেখ হাসিনার শাসনামলে গরীব মানুষের অর্থ কীভাবে লুটপাট হয়েছে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। লুটপাটের এমন মাত্রা যে, বহুপাক্ষিক সংস্থাগুলো পর্যন্ত নিরব ছিল।"
কমিটির অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিগত শাসনামলে বড় প্রকল্পগুলোতে অস্বাভাবিক ব্যয়ের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। সাতটি বড় প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১,১৪,০০০ কোটি টাকা। পরে অতিরিক্ত খরচ দেখিয়ে তা ১,৯৫,০০০ কোটি টাকায় পৌঁছায়।
কমিটির সদস্য মুস্তাফিজুর রহমান জানান, ২৯টি প্রকল্পের মধ্যে ৭টি পরীক্ষা করে দেখা গেছে প্রতিটিতেই ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে। অন্যদিকে, সদস্য এ কে এনামুল হক বলেন, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ৭ লাখ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে, যার ৪০ শতাংশ আমলারা লুটপাট করেছে।
কমিটির প্রতিবেদনে কর অব্যাহতি এবং বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতি নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে। কর অব্যাহতি হ্রাস করে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন সদস্য মোহাম্মদ আবু ইউসুফ। বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে ৩ বিলিয়ন ডলার অবৈধ লেনদেনের তথ্য উল্লেখ করেছেন সদস্য এম তামিম।
প্রতিবেদনটি খুব শিগগিরই জনসাধারণের জন্য প্রকাশ করা হবে বলে জানা গেছে। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন সাথী, এবং সিনিয়র সচিব লামিয়া মোর্শেদ।
إرسال تعليق
Please do not enter any spam link in the comment box.